খবরঃ
সব মসজিদে একই খুতবা দেওয়ার জন্য ইমাম-খতিবদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। এছাড়া জুমার খুতবাকে প্রাণবন্ত করতে আরবি খুতবার বিষয়বস্তু আগের বক্তব্যে তুলে ধরারও পরামর্শ দেন তিনি। মঙ্গলবার রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে জেলা পর্যায়ের ইমাম-খতিবদের নিয়ে বাংলাদেশ মসজিদ মিশন আয়োজিত প্রতিনিধি সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন। জামায়াত আমীর বলেন, মসজিদে নববীই ছিল রাসুল (সা.) এর পার্লামেন্ট, মসজিদই ছিল কেবিনেট। সেখানে বসেই সবকিছু পরামর্শ করা হতো, সেখানেই তিনি বিচার করতেন। এখন মসজিদে ইমাম-খতিব বয়ান দেন তা অনেকেই মিস করেন। পবিত্র জুমার যে প্রাণশক্তি তা পরিষ্কার করা হয়নি। (https://www.dailyamardesh.com/politics/amdrlqusjnw0v)
মন্তব্যঃ
জুম্মার খুতবা খিলাফতের (ইসলামী রাষ্ট্র) একটি গুরুত্বপূর্ণ যোগাযোগ মাধ্যম। এর মাধ্যমে শাসক রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে রাষ্ট্রের নাগরিকদের সচেতন এবং ঐক্যবদ্ধ করতেন। খিলাফতের কেন্দ্র থেকে প্রান্তিক অঞ্চল পর্যন্ত সকল স্থানে শাসক (খলিফা/সুলতান/ইমাম) বা তার প্রতিনিধি রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ এবং পররাষ্ট্র কর্মসূচীসমূহ প্রাণবন্তভাবে জনগণের সামনে উপস্থাপন করতেন, যাতে জনগণ রাষ্ট্রের স্বল্প মেয়াদী এবং দীর্ঘ মেয়াদী কর্মসূচী সম্পর্কে অবগত থাকতে পারে। রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর খুতবাও ছিল খুবই প্রাণবন্ত এবং দিকনির্দেশনাপূর্ণ। রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) যখন খুতবা দিতেন, তখন তাঁর চোখ লাল হয়ে যেত, তাঁর কণ্ঠস্বর উঁচু হত এবং তাঁর ক্রোধ বেড়ে যেত; যেন তিনি লোকেদেরকে এমন এক সেনাবাহিনী সম্পর্কে সতর্ক করছেন, যা আজই সন্ধ্যা অথবা সকালে তাদেরকে এসে আক্রমণ করবে (মুসলিম, ইবনে মাজাহ্, সুনান)। রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর পরবর্তী খলিফারাও খুতবাকে একই গুরুত্বের সাথে প্রদান করতেন। সম্মানিত খতিবদের খুতবা মুসলিমদের উম্মাহ্’র ঐক্য সৃষ্টি এবং টিকিয়ে রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতো।
খুতবা খুবই রাজনৈতিক গুরুত্ব বহন করে। তাই খিলাফত ধ্বংসের পর থেকে পশ্চিমারা ও তাদের দালাল শাসকেরা মসজিদের খুতবায় ইসলামের রাজনৈতিক দর্শন (খিলাফত), রাজনৈতিক কর্তব্যের (সৎ কাজের আদেশ এবং অসৎ কাজের নিষেধ) এবং শাসকগোষ্ঠীর সমালোচনা যাতে না থাকে এই বিষয়ে সর্বদা তৎপর ছিল। যেমন, আমরা দেখেছি পতিত স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার সময় ইসলামী ফাউন্ডেশন থেকে খুতবা তৈরি করে প্রত্যেকটি মসজিদে প্রেরণ করা হয়েছিল, যার বিষয়বস্তু ছিল পশ্চিমাদের War on terror প্রকল্পের নামে ইসলামের রাজনৈতিক দর্শনকে জঙ্গিবাদ হিসেবে লেবেলিং করা। বিস্তারিত জানতে দেখুনঃ সব মসজিদে একই খুতবা পাঠের আহ্বান, প্রথম আলো, ১৪ জুলাই ২০১৬। এমনকি, পুলিশ, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা প্রশাসনিক ক্ষমতা ব্যবহার করে জুম্মার খুতবাকে নজরদারীতে রাখতো এবং শাসকগোষ্ঠীর প্রশংসা করতে বাধ্য করতো।
সুতরাং, ধর্মনিরপেক্ষ-গণতান্ত্রিক শাসকগোষ্ঠীর অধীনে সব মসজিদে একই খুতবা দেয়ার প্রক্রিয়া পশ্চিমা কাফিরদের কর্তৃক তাদের দালাল শাসকদের মাধ্যমে মসজিদের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার প্রক্রিয়া হিসেবে সহায়তা করবে। সকল মসজিদে একই খুতবা প্রদানের বাধ্যবাধকতা নিষ্ঠাবান খতিবদেরও সৎকাজের আদেশ এবং অসৎকাজের নিষেধের ইসলামী দায়িত্ব পালনে বাধা দিবে এবং এই প্রতিষ্ঠানটিকে সেকুলার শাসকগোষ্ঠী তাদের হীন রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলে ব্যবহার করবে। সুতরাং, খিলাফতের তত্ত্বাবধানে সকল মসজিদের মিম্বর থেকে প্রদানকৃত খুতবাগুলো প্রকৃতপক্ষে খুতবা প্রথার প্রচলনের প্রকৃত ইসলামী উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন সম্ভব হবে।
- মো: সিরাজুল ইসলাম