খবরঃ
নতুন বছরে সংসার খরচ আরও বাড়বে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) চাপে ৬৫ পণ্য ও সেবার ওপর ভ্যাট বাড়ানো হয়েছে। এ তালিকায় আছে-জীবন রক্ষাকারী ওষুধ, এলপি গ্যাস, গুঁড়া দুধ, বিস্কুট, আচার, টমেটো কেচাপ/সস, সিগারেট, জুস, টিস্যু পেপার, ফলমূল, সাবান, ডিটারজেন্ট পাউডার, মিষ্টি, চপ্পল (স্যান্ডেল), বিমান টিকিট। এসব পণ্য ও সেবার দাম বাড়বে, যা মূল্যস্ফীতিকে উসকে দিয়ে সাধারণ মানুষের কষ্ট বাড়াবে। … আরও জানা গেছে, ঋণ দিতে আইএমএফ বাংলাদেশকে কর-জিডিপির অনুপাত দশমিক ২ শতাংশ বাড়ানোর শর্ত দিয়েছে, টাকার অঙ্কে যা ১২ হাজার কোটি টাকার বেশি। এই ২০২৪-২৫ অর্থবছরের রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রার (৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা) সঙ্গে যোগ হবে। বাজেট প্রণয়নের সময় এনবিআরকে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করে দেয় অর্থ মন্ত্রণালয়। এই লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবভিত্তিক নয় বলে এনবিআর থেকে একাধিকবার জানানো হয়েছে। তার ওপর আইএমএফ আরও ১২ হাজার কোটি টাকা আদায়ের বোঝা চাপিয়ে দিয়েছে। এ অবস্থায় ভ্যাট হার বাড়ানোর বিকল্প ছিল না। সূত্র আরও জানায়, উপদেষ্টা পরিষদ নতুন ভ্যাট হারের বিষয়টি অনুমোদন দিয়েছে। আগামী ২-৩ দিনের মধ্যে নতুন প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে। যেহেতু সংসদ নেই, সেহেতু অধ্যাদেশ আকারে জারি হবে। (https://www.jugantor.com/tp-firstpage/898000)
মন্তব্যঃ
জুলাই ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুথানের পরবর্তী গঠিত অর্ন্তবর্তীকালীন সরকারকে জনগণ তাদের সরকার মনে করছিল। এই সরকারের কাছ থেকে জনগণের প্রত্যাশা ছিল সরকার জনগণের জীবনকে সহজ এবং স্বাচ্ছন্দ্যময় করার জন্য জনবান্ধব পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। কিন্তু, বাস্তবতায় সরকারের পদক্ষেপগুলো পূর্ববর্তী সরকারগুলোর মত বিশেষগোষ্ঠীর (সরকারের ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য গুরুত্বপূর্ণ) তোষণ এবং উপনিবেশবাদী প্রতিষ্ঠান আইএমএফের প্রেসস্ক্রিপশনের অন্ধ অনুসরণ ছাড়া আর কিছু দেখা যাচ্ছে না। সরকার ইতিমধ্যে, বিচার বিভাগের কর্মকর্তাদের জন্য সুদমুক্ত ঋণে গাড়ি ক্রয় এবং গাড়ি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রতি মাসে ৫০ হাজার টাকা প্রদান করার নীতিমালা প্রণয়ন করেছে। (বিস্তারিত জানতে দেখুনঃ গাড়ি কিনতে সুদমুক্ত ৩০ লাখ টাকা ঋণ পাবেন বিচারকরা, ইত্তেফাক,ডিসেম্বর ১৫, ২০২৪)। সরকারি কর্মচারীদের খুশি করতে মহার্ঘ ভাতা প্রদান করার নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। (বিস্তারিত জানতে দেখুনঃ সরকারি কর্মচারীদের জন্য সংশোধিত বাজেটে মহার্ঘ ভাতায় বরাদ্দ রাখার চিন্তা, প্রথম আলো, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪)। আই.এম.এফ-এর পরামর্শে অর্থবছরের মাঝখানে ৬৫ টি পণ্যের উপর ভ্যাট বৃদ্ধি করছে। ভ্যাট বৃদ্ধির নেতিবাচক প্রভাবের বিষয়ে প্রশ্ন করলে অর্থ উপদেষ্টা অতীতের শাসকগোষ্ঠীর মতই বলেন, ‘মনে হয় না কষ্ট হবে।’ কিন্তু, বাস্তবতা হচ্ছে ভ্যাট বৃদ্ধির তালিকায় ঔষুধ, পোশাক, রেস্টুরেন্ট, মোবাইল ফোনসহ আরও অনেক কিছুই নিত্যপণ্য। আর এই পণ্য/সেবাগুলোর মূল্যবৃদ্ধি মূল্যস্ফীতিকে উসকে দিবে এটা বোঝার জন্য বিশেষজ্ঞ হওয়ার প্রয়োজন নাই। আই.এম.এফ-এর পরামর্শে এটি করা হচ্ছে কি না, তা জানতে চাইলে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘না, সবদিক চিন্তাভাবনা করেই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’ আই.এম.এফ-এর পরামর্শে ভ্যাট বৃদ্ধি করা হলেও অর্থ উপদেষ্টা তা অস্বীকার করে নিজেকে আই.এম.এফ-এর স্বার্থরক্ষার অনুগত কর্মচারী হিসাবে প্রমাণ করলেন। অথচ, দেশের অর্থনীতি নিয়ে খোঁজখবর রাখে এমন যেকোন ব্যক্তিমাত্রই জানে বাংলাদেশের জনগণের অর্থনৈতিক দুর্দশার একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কারণ হচ্ছে, বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ এর হঠকারী Structural Adjustment Program (SAP), বেসরকারীকরণ নীতি প্রকল্প। (বিস্তারিত জানতে দেখুনঃ গণআদালতে বিশ্বব্যাংক–আইএমএফ–এডিবি: যে প্রশ্নের জবাব আজও মেলেনি, প্রথম আলো, ২৫ জানুয়ারি ২০২৩)। প্রশ্ন হচ্ছে উপনিবেশবাদী প্রতিষ্ঠান বিশ্বব্যাংক-আইএমএফের পলিসি এবং তাদের বুদ্ধিবৃত্তিক কর্মচারীদের দেশের অর্থনীতি পরিচালনার দায়িত্ব প্রদান করে জনগণের আকাঙ্খা পূরণ করা সম্ভব কি?
জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য উপনিবেশবাদীদের যুলুমমূলক পুঁজিবাদী ব্যবস্থা এবং তাদের অনুগত বুদ্ধিজীবি ও রাজনীতিবিদদের প্রত্যাখান করে ইসলামের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করতে হবে। ইসলামী অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় জনগণের আয়-ব্যয়ের উপর কর আরোপ এবং ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য বিশেষগোষ্ঠীকে অনৈতিক সুবিধা প্রদান বৈধ নয়। রাষ্ট্রের সকল নাগরিকদের জন্য ন্যায্য অর্থনৈতিক সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে স্বনির্ভর অর্থনীতি তৈরি করাই হচ্ছে ইসলামী অর্থনীতির মূল লক্ষ্য। ইতিহাস স্বাক্ষী ইসলামের অর্থনীতি বাস্তবায়নের ফলে এতটাই সমৃদ্ধি অর্জিত হয়েছিল যে স্বল্প সময়ের মধ্যে খিলাফত রাষ্ট্রে যাকাত গ্রহণের উপযুক্ত একজন নাগরিকও অবশিষ্ট ছিল না। “আর যদি সে সব জনপদের অধিবাসীরা ঈমান আনত এবং তাকওয়া অবলম্বন করত তবে অবশ্যই আমরা তাদের জন্য আসমান ও যমীনের বরকতসমূহ উন্মুক্ত করে দিতাম” (সূরা আল-আ‘রাফ: ৯৬)।
- মো: সিরাজুল ইসলাম