দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদের সুপারিশ আসছে

 

খবরঃ

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান-পরবর্তী প্রেক্ষাপটে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদের দাবি অনেকটা জোরালো হয়ে উঠেছে। সংবিধান সংস্কার কমিশনের মতবিনিময় সভায় অনেকেই এর পক্ষে প্রস্তাব দিয়েছেন। আলোচনায় এবং লিখিতভাবে বিভিন্ন দল, সংগঠন ও শ্রেণী-পেশার মানুষ দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদের কথা বলেছেন। নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনে দেওয়া প্রস্তাবেও এমন সুপারিশ করেছেন অনেকে।… (https://samakal.com/bangladesh/article/272952/দ্বিকক্ষবিশিষ্ট-সংসদের-সুপারিশ-আসছে)

মন্তব্যঃ

সংস্কারের নামে দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট আইনসভার সুপারিশ ‘নতুন বোতলে পুরান মদ ভরা’র সুপারিশ করার মতোই একটা অদ্ভুত ও অকার্যকর প্রস্তাবনা। এটি প্রবর্তনের পেছনে যুক্তি দেয়া হচ্ছে, দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভা চালু থাকলে জনগণের প্রতিনিধি (নিম্ন কক্ষ) তাদের নিজেদের স্বার্থে বা স্বৈরাচারী উদ্দেশ্যে কোনো ইচ্ছামত আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে পারবে না। কারণ, সাধারণত এই ধরনের আইনসভায় নিম্ন কক্ষের সদস্যরা জনগণের দ্বারা নির্বাচিত হন এবং তাদের আইন প্রণয়নের ক্ষমতা থাকে, তবে সেই আইন কার্যকর করতে উচ্চ কক্ষের অনুমোদন প্রয়োজন হয়। এই ধরনের আইনসভায় আইন প্রণয়নে সমান ক্ষমতার ভারসাম্য বা ‘চেক অ্যান্ড ব্যালেন্স’ নিশ্চিত করা হয়। 

বিশ্বে উচ্চ কক্ষের বিভিন্ন রকম কাঠামোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য যেমন, সরাসরি নির্বাচিত (যেমন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটে); নিযুক্ত (যেমন যুক্তরাজ্যের হাউস অব লর্ডস); পরোক্ষভাবে নির্বাচিত (সংসদের সদস্যদের দ্বারা নির্বাচিত, যেমন ভারতের লোকসভার (নিম্ন কক্ষ) সদস্যরা রাজ্যসভার (উচ্চ কক্ষ) সদস্যদের নির্বাচিত করে)। অর্থাৎ উচ্চ কক্ষের সদস্যরা হয় নির্বাচিত অথবা নিযুক্ত। সেক্ষেত্রে, যদি উচ্চ ও নিম্ন উভয় কক্ষে একটি দলের সংখ্যাগরিষ্টতা থাকে অথবা উচ্চ কক্ষের সদস্য নিয়োগ যদি নিম্নকক্ষের বিজয়ী দলের পছন্দের লোকদের মাধ্যমে হয় তবে কিভাবে ক্ষমতার ভারসাম্য নিশ্চিত হবে, এই প্রশ্নের সমাধান নাই। গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় বাংলাদেশের মত রাজনৈতিক মেরুকরণের একটি দেশে সংসদে একটি দলের সংখ্যাগরিষ্টতা থাকবে এবং তাদের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ পছন্দের লোকেরা উভয় কক্ষ নিয়ন্ত্রণ করবে তা বোঝার জন্য অনেক জ্ঞানী হওয়ার প্রয়োজন নাই। এখানে মূল সমস্যা হলো, মানুষের হাতে আইন প্রণয়নের সার্বভৌম ক্ষমতা, যা আইনপ্রণয়নকারী গোষ্ঠীকে লোভী ও স্বৈরাচারে পরিণত করে। তাই এটাকে মানুষের হাত হতে আইন প্রণয়নের এই সার্বভৌম ক্ষমতা তুলে না নেয়া পর্যন্ত ক্ষমতার ভারসাম্য কখনোই নিশ্চিত হবে না।

ইসলামে বিধান প্রণয়নের একমাত্র এখতিয়ার আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা’র নিকট ন্যস্ত। আর শাসন কর্তৃত্ব জনগণের। আল্লাহ্‌’র বিধানকে বাস্তবায়নের শর্তে জনগণ শাসককে নির্বাচিত করেন এবং এই শর্ত ভঙ্গের সাথে সাথে শাসকের আর বৈধতা থাকে না। যা বর্তমান গণতান্ত্রিক শাসনের সাথে একটি মৌলিক পার্থক্য। ফলে শাসক, নির্বাহী বিভাগ, বিচার বিভাগ সবাই একই শারীআহ্‌ বিধান দ্বারা আবদ্ধ এবং স্বৈচ্ছাচারীতার কোন সুযোগ নাই। সুতরাং, বর্তমানে ক্ষমতার ভারসাম্যের যে বিতর্ক ইসলাম সহজেই এটাকে এভাবে সমাধান করেছে। আল্লাহ্‌ (সুবহানাহু ওয়া তা'আলা) বিধানের নড়চড় করা খলিফার (ইসলামী শাসনব্যবস্থা বা খিলাফত রাষ্ট্রের প্রধান) পক্ষে সম্ভব নয়। এই বিধানে রয়েছে ‘মজলিস আল উম্মাহ্‌’র মত কাউন্সিল, যার সদস্যগণ জনগণের ভোটে প্রত্যক্ষভাবে নির্বাচিত হয়ে শাসক নির্বাচন করেন এবং শাসকদেরকে জবাবদিহিতা করেন। এই সদস্যদের বিধি-বিধান প্রণয়নের কোন ক্ষমতা থাকে না। শাসকের যোগ্যতা যাচাই হয় ‘মাজালিম কোর্ট’ নামক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে। এই প্রক্রিয়ায় চুল-চেরা বিশ্লেষণের মাধ্যমে যেমন একদিকে উম্মতের মধ্য থেকে শাসনের জন্য সর্বাপেক্ষা ন্যায়পরায়ণ ও যোগ্য ব্যক্তিটি নির্বাচিত হওয়া সম্ভব, তেমনি তার কঠোর জবাবদিহিতাও নিশ্চিত করা সম্ভব। এই জবাবদিহিতা এতটাই সুনির্দিষ্ট যে, একজন ব্যক্তিও যদি ক্ষুধার্ত থাকেন, তাহলে তিনি শাসকের বিরুদ্ধে মাযালিম কোর্টে মামলা করতে পারবেন। আর আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা’র নিকট বিচার দিবসে জবাবদিহিতার বিষয়টিতো রয়েছেই। তাই জনগণের জন্য ক্ষতিকর মানুষের তৈরি বিধানের পরিবর্তে আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা’র বিধানের পবিত্র পানীয় দ্বারাই ‘রাষ্ট্র’ নামক বোতলটি পূর্ণ করা উচিত।

    -    মোঃ জহিরুল ইসলাম

Post a Comment

Previous Post Next Post

Popular Items