গ্যাসের দাম বৃদ্ধির প্রস্তাবে ক্ষোভ ব্যবসায়ীদের

খবরঃ

শিল্পখাতে গ্যাসের প্রতি ইউনিটের দাম ৩০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৭৫ টাকা করার প্রস্তাবকে অযৌক্তিক আখ্যা দিয়ে দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী নেতারা বলেছেন, এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে ব্যবসা গুটিয়ে নেওয়া ছাড়া উপায় থাকবে না। দেশকে অস্থিতিশীল করতে এ প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। ব্যবসায়ীদের বক্তব্যের জবাবে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, “দাম বাড়ানো বা বিভিন্ন কর বাড়ানো সরকারের পক্ষে কিন্তু স্বস্তিদায়ক নয়। তারপরেও অনেক ক্ষেত্রে করতে হচ্ছে, কারণ বিগত সরকার এ দেশে বড় নৈরাজ্য করে গেছে। প্রচুর টাকা পাচার করে নিয়েছে।” (https://www.jugantor.com/tp-firstpage/900941)

মন্তব্যঃ

এই মূহুর্তে অর্থবছরের মাঝামাঝি সময়ে নজিরবিহীনভাবে দেশের শিল্পখাতে গ্যাসের দাম বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত, শতাধিক পণ্য ও সেবায় মূল্য সংযোজন কর বা (ভ্যাট) ৫-১০% থেকে বাড়িয়ে ১৫% করা, ব্যাংক ঋণে সুদের হার বৃদ্ধি এবং ইলেকট্রনিক্স খাতের কর্পোরেট ট্যাক্স একলাফে ১০% থেকে ২০% বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত এই সবকিছু যে আইএমএফ এর শর্ত অনুসরণ করে করা হয়েছে তা নিয়ে কারো মধ্যে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই। এর বাইরেও সামগ্রিক কর আদায় বৃদ্ধি, ভর্তুকি কমানো, বিদ্যুৎ, জ্বালানি তেল ও সারের মূল্যবৃদ্ধির বিষয়গুলো পাইপলাইনে রয়েছে যা হয়ত সামনের দিনগুলোতে প্রকাশিত হবে। এই সবই করা হচ্ছে, আইএমএফ থেকে প্রতিশ্রুত ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণের মধ্যে বাকি মাত্র ২৩৯ কোটি ডলার পাওয়ার জন্য, যা কিনা প্রবাসীদের ব্যাংকিং চ্যানেলে পাঠানো ১ মাসের রেমিটেন্সের সমান। গত মাসেও (ডিসেম্বর, ২০২৪) ব্যাংকিং চ্যানেলে দেশে এসেছে ২৬৩ কোটি ৮৭ লাখ ৮০ হাজার মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স এবং এর সাথে ব্যাংকিং খাতের বাইরের রেমিট্যান্সতো রয়েছেই। এই সামান্য ২৩৯ কোটি ডলার ঋণের অর্থ পেতে দেশের অর্থনীতির মূল নিয়ামক খাতগুলোকে ধ্বংস ও জনজীবনকে দু্র্বিষহ করে ফেলার সিদ্ধান্তকে পৃথিবীর প্রচলিত বা অপ্রচলিত কোন অর্থনৈতিক তত্ত্ব দিয়েই জাস্টিফাই করার নূন্যতম সুযোগ নেই। 

অথচ, ড. ইউনুসের নেতৃত্বাধীন এই অন্তর্বর্তী সরকার শুধুমাত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আজ্ঞাবহ থাকতে মার্কিন প্রতিষ্ঠান আইএমএফ-এর কাছে দেশের অর্থনীতিকে সমর্পন করছে এবং জনগণের দুর্দশার কোন তোয়াক্কাই করছে না। বিশ্বব্যাপী প্রতিষ্ঠিত যে, আইএমএফ-এর পরামর্শ অনুসরণ করে কোন দেশের অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়ানোর নজির নাই, বরং এসব দেশসমূহ চরম পরনির্ভরশীল ও দারিদ্র অর্থনীতিতে পরিণত হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, সুদানকে একসময় বলা হতো “রুটির ঝুড়ি”, আর আইএমএফ-এর পরামর্শ অনুসরণ করে সুদান বর্তমানে অন্যতম দুর্ভিক্ষ পীড়িত দেশে পরিণত হয়েছে। সুতরাং, যেসব শাসক, রাজনীতিবিদ ও বুদ্ধিজীবিরা মার্কিনীদের পক্ষে সাফাই গায়, তারা এই দেশে একই নিষ্ঠুর বাস্তবতাকে এগিয়ে নিতে মার্কিনীদের সহায়তা করছে। তাই, দেশের সাধারণ জনগণকে এই গোষ্ঠীর চক্রান্ত সম্পর্কে সজাগ থাকতে হবে। 

আইএমএফ-বিশ্বব্যাংকের কাজ হলো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী আমেরিকার নেতৃত্বে যে বিশ্বব্যবস্থা গড়ে উঠেছে তা রক্ষা করার হাতিয়ার। এর মাধ্যমে আমেরিকা উদীয়মান অর্থনীতির দেশগুলোর স্বনির্ভরতাকে ধ্বংস করে দেশগুলোর ‘চলতি হিসাবের’ মধ্যে গরবর করে দিয়ে ঋণের জালে আটকে ফেলে। এই ব্যর্থ বিশ্বব্যবস্থার ‘সেন্টার অব গ্র্যাভিটির’ কেন্দ্রবিন্দুতে আমেরিকার অবস্থানকে সুরক্ষিত করার লক্ষ্যে বিকল্প বিশ্বব্যবস্থা হিসেবে খিলাফতের উত্থানকে ঠেকানোর জন্য আইএমএফ-বিশ্বব্যাংক বিভিন্ন মুসলিম দেশগুলোতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে এবং এই কাজে তাদের হয়ে মুসলিম নামধারী কিছু ব্যক্তিত্ব মুসলিম উম্মাহ্‌’র মধ্যে ভাইরাস (চর) হিসেবে কাজ করছে। আমেরিকার সামগ্রিক নিয়ন্ত্রণ থেকে দেশকে মুক্ত করার উদ্যোগে এই উম্মাহ্‌ প্রকৃত অভিভাবক হিযবুত তাহ্‌রীর-কে সহায়তা না করে শুধু ‘ক্ষোভ প্রকাশে’ সীমাবদ্ধ থাকলে সামনের দিনগুলোতে দেশের অর্থনীতি ও ব্যবসা-বাণিজ্য আরো কঠিন ও নিশ্চিত ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যাবে।

    -    রিসাত আহমেদ

Post a Comment

Previous Post Next Post

Popular Items