সৌদি আরব বাংলাদেশে বিনিয়োগ বাড়াতে চায় কিন্তু বিগত সরকার তা হতে দেয়নি


খবরঃ

সৌদি তেল কোম্পানি আরামকো ও দক্ষিণ কোরিয়ার স্যামসাং বিনিয়োগ করতে চেয়েছিলো। কিন্তু বিগত সরকার তাদের স্বাগত না জানিয়ে বিমানবন্দর থেকে তাড়িয়ে দিয়েছিলো। এমন তথ্য দিলেন অর্থ উপদেষ্টা। সৌদি রাষ্ট্রদূতও অভিযোগ করেছেন, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের পথে বাঁধা তৈরি করতো আওয়ামী লীগের প্রভাবশালীরা। (https://www.itvbd.com/economy/193949/‘সৌদি-আরব-বাংলাদেশে-বিনিয়োগ-বাড়াতে-চায়-কিন্তু-বিগত)

মন্তব্যঃ 

বিগত সরকার কর্তৃক সৌদি তেল কোম্পানী আরামকো ও দক্ষিণ কোরিয়ার স্যামসাংকে বিনিয়োগে বাঁধা তৈরি করার বিষয়কে যেভাবে বর্তমান সরকারের অর্থ উপদেষ্টা সরলভাবে উপস্থাপন করছেন প্রকৃত সমীকরণ ততটা সরল নয়। বরং, এর পিছনে রয়েছে বিগত সরকার এবং বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের মধ্যেকার উপনিবেশবাদী ব্রিটিশ-ভারত বলয় থেকে সম্পূর্ণভাবে উপনিবেশবাদী আমেরিকান বলয়ে দেশকে নিয়ে যাওয়ার লড়াই। স্বাধীনতার পর পরই ব্রিটিশ নিয়ন্ত্রিত শেখ মুজিবুর রহমান সরকার ক্ষমতায় এসে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম অ্যাক্ট ১৯৭৪ এর অধীনে দেশের কৌশলগত জ্বালানী সম্পদকে উত্তোলনে নিজস্ব স্বয়ংসম্পূর্নতা অর্জনের পরিবর্তে আন্তর্জাতিক তেল কোম্পানীগুলোর (Big Oil) কাছে উন্মুক্ত করে দেয়। কার্যত, ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানীর মত তৎকালীন এই ৭ টি সেভেন সিসটার Big Oil কোম্পানী শেল, বিপি, মবিল, শেভরন, গালফ, টেক্সাকো এবং এসসো এর কাছে দেশের জ্বালানী সম্পদ উন্মুক্ত করার মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশে বিদেশী কোম্পানীর আধিপত্য প্রতিষ্ঠার রাজনৈতিক প্রতিযোগিতা শুরু হয়। এরপর ১৯৯৮ সালে শেখহাসিনা সরকার ব্রিটিশ কোম্পানী শেল, কেয়ার্ন এনার্জি এবং অস্ট্রেলিয়ান কোম্পানি সান্টোস এর কাছে আরো ৪ টি হাইড্রো-কার্বন ব্লক তুলে দেন। তারপর ধারাবাহিকভাবে বিএনপি-জামাত সরকারের সময় ২০০৫ সালে শেভরন, শেখ-হাসিনার আমলে ২০০৯ সালে কনোকোফিলিপস্‌, ২০১২ সালে গ্যাজপ্রম, এবং ২০২১ সালে ওএনজিসি বাংলাদেশের জ্বালানীর সম্পদের প্রায় ৬০ শতাংশের নিয়ন্ত্রণ নেয়। সুতরাং, বাংলাদেশে বর্তমান সেভেন সিস্টার তেল কোম্পানীগুলোর অন্যতম প্রো-আমেরিকান সৌদি তেলকোম্পানী সৌদি-আরামকোর এবং টেক জায়ান্ট স্যামসাং-এর বিনিয়োগ করতে চাওয়া, ফিরিয়ে দেয়া এবং পুনরায় সুযোগ দেওয়াকে এই ছকে বুঝতে হবে। মূলত, হাসিনা সরকারের আমলে বাংলাদেশ অধিক পরিমানে ব্রিটিশ-ভারত নিয়ন্ত্রিত থাকায় তৎকালীন সময়ে প্রো-আমেরিকান কোম্পানীগুলো অনেকক্ষেত্রে সুবিধাবঞ্চিত হয়েছে। সৌদি-আরামকো এবং স্যামসাং-এর ফিরে যাওয়া এরই কারণ। আবার, ক্ষমতায় টিকে থাকার শর্তে আমেরিকান হুমকী মোকাবেলায় অনেকক্ষেত্রে সুবিধাও দিয়েছে। যেমন, ২০২৩ সালে গভীর সমুদ্রের ১৫টি হাইড্রো-কার্বনে ব্লকের সবকয়টি আমেরিকান উপনিবেশবাদী কোম্পানী এক্সোন-মবিলের হাতে তুলে দেওয়া যার প্রমাণ। একই ধারাবাহিকতায় বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার প্রো-আমেরিকান বলয়ের হওয়ায় এখন প্রো-আমেরিকান কোম্পানীগুলোর সুযোগ বৃদ্ধি পাচ্ছে। যা প্রমাণ করে বাংলাদেশ জুলাই’২৪ এর অভ্যুত্থানের পর দ্বিতীয়বার আসলে স্বাধীন হয়নি বরং ব্রিটিশ-ভারতীয় গোলামীর বলয় থেকে আমেরিকান গোলামীর বলয়ে দ্রুততার সাথে প্রবেশ করছে।

প্রশ্ন হচ্ছে, উপনিবেশবাদী শক্তির গোলামীর বলয়ে আর কতদিন? এত রক্ত, জীবন দেওয়ার পরে আবারো সেই আমেরিকান কুফর উপনিবেশবাদী শক্তির কাছে দেশ ও জনগণের ভাগ্যকে তুলে ধরার যে প্রতিযোগীতা বর্তমান সরকারের মধ্যে দৃশ্যমান তা কি মুসলিম উম্মাহ্‌কে জুলুম ও বৈষম্য থেকে মুক্তি দিতে পারবে? স্পষ্টতই যা সম্ভব নয়। কেননা, ব্রিটেন, ভারত কিংবা আমেরিকান গোলামি করে মুসলিম উম্মাহ্‌ কখনোই মেরদণ্ড শক্ত করে দাঁড়াতে পারবে না। বরঞ্চ, আজীবন এদের আধিপত্য মেনে চলতে হবে। এর থেকে মুক্তির একমাত্র পাথেয় আল্লাহ্‌ প্রদত্ত মুক্তির সমাধান ইসলামী খিলাফত ব্যবস্থা, যা উম্মাহ্‌’র কৌশলগত সম্পদকে উপনিবেশবাদী শক্তির বলয় থেকে মুক্ত করে উম্মাহ্‌কে আবারো শক্তিশালী করবে। 

    -    আসাদুল্লাহ্‌ নাঈম

Post a Comment

Previous Post Next Post

Popular Items