খবরঃ
জুলাই অভ্যুত্থানে আহত ১০০ জনকে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করার প্রস্তাব দেওয়ার কথা জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। আজ মঙ্গলবার রাজধানীর মালিবাগে পুলিশের বিশেষ শাখা (এসবি) ও অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) প্রধান কার্যালয় পরিদর্শন শেষে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা এই তথ্য সাংবাদিকদের জানান। জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ‘আহতদের স্বচ্ছলতায় ফেরাতে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। যাঁরা আহত হয়েছেন, সবাইকে তো সব জায়গায় দেওয়া সম্ভব না। আমাদের প্রস্তাবে যাঁকে যেখানে সম্ভব, সেখানে তাঁদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করার কথা বলা হয়েছে। [জুলাই অভ্যুত্থানে আহত ১০০ জনকে কর্মসংস্থানের প্রস্তাব | প্রথম আলো]
মন্তব্যঃ
১৯৭১ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত বাংলাদেশে বেকারত্বের সংখ্যা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেয়েই যাচ্ছে। বর্তমানে বাংলাদেশে বেকারের সংখ্যা ২৫ লাখ ৯০ হাজার। শিক্ষিত-অশিক্ষিত, মেধাবী-অমেধাবীদের মধ্যে অনেকেই আকাশপথ নয়তো নিশ্চিত মৃত্যু সমুদ্রপথে বিদেশে যাওয়াকে শ্রেয় মনে করছে। এরকম অবস্থায় জুলাই অভ্যুত্থানের ২২ হাজার আহত ছাত্রদের মধ্য থেকে কয়েকশ ছাত্রদের চাকরির ব্যবস্থা করা মূলতঃ ছাত্রজনতাকে খুশি করার নামে বেকারত্ব নামক মৌলিক সমস্যাকে সমাধান না করার আবহমান কালের ধারা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আমলেও লক্ষ্য করা যাচ্ছে। একজন সাধারণ মানুষও যেখানে এখন বুঝতে পারছে যে বাংলাদেশের মত সম্ভাবনাময় অঞ্চলে চামড়া শিল্প, পাট শিল্প, চিনি শিল্প, ভারী মেশিন তৈরি, অস্ত্র উৎপাদন এবং তেল-গ্যাস উত্তোলনে স্বনির্ভরতা ইত্যাদি প্রকল্পের মাধ্যমে একদিকে রাষ্ট্র যেমন ব্রিটিশ-আমেরিকার নিয়ন্ত্রন থেকে বের হয়ে সার্বভৌমত্ব অর্জন করবে, অন্যদিকে স্বয়ংক্রিয়ভাবেই প্রচুর কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। এরকম সামগ্রিক এবং মৌলিক পরিবর্তনের পথে না হেঁটে কেন তারা কোরিয়ান এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোন বাস্তবায়নে সংকল্পবদ্ধ? যেখানে এধরনের ইপিজেডগুলোর মাধ্যমে বিদেশী কোম্পানিগুলো মূলতঃ রপ্তানির মাধ্যমে ডলারের মুলা দেখিয়ে কর অবকাশ, শুল্কমুক্ত আমদানি, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের সহজলভ্যতা, সস্তা শ্রম ইত্যাদি অভিজাত শ্রেণীসুলভ সুযোগ সুবিধা উপভোগ করে। অথচ রাষ্ট্রীয়ভাবে দেশীয় শিল্পগুলোকে এই সুযোগ দিলে এতদিনে বাংলাদেশ ডলারের নির্ভরতা থেকেও বের হয়ে আসতে পারত। বেকারত্বও দূর হয়ে যেত।
প্রশ্ন চলেই আসে যে বিগত পঞ্চাশ বছরেরও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশের মত রাষ্ট্রগুলো কেন এই কাজ করে গেছে এবং কেন এই অন্তর্বর্তী সরকারও একই পথে হাঁটছে? এমনকি প্রতারণার স্টাইলও কপি করে যাচ্ছে। যেমন করে আওয়ামী লীগ “মুক্তিযোদ্ধাদের” বিশেষ সুবিধা দেয়ার ভান করে মূল সমস্যা আড়াল করত, একইভাবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারও “ছাত্রজনতাকে” বিশেষ সুবিধা দেয়ার ভান করে মূল সমস্যাকে আড়াল করে যাচ্ছে। আদর্শগত কারণে তারা এই প্রতারণাগুলো করে। কারণ ধর্মনিরপেক্ষ পুঁজিবাদী আদর্শ যা বর্তমানে বিরাজমান তা কখনোই জনমানুষের দায়িত্ব নেয় না, তারা দায়িত্ব নেয় কতিপয় পুঁজিপতি বা ধনিক শ্রেণীর। সেই বৈশিষ্ট্যকে অনুসরণ করেই এই শাসকদের দায়িত্ব হল পশ্চিমা প্রভুদের খুশি রাখা।
শাসকগোষ্ঠীর পশ্চিমা প্রভুদের কবল থেকে মুক্ত হয়ে যতক্ষণ না আমরা প্রকৃত প্রভু আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা’র দিকে ফিরে না যাব, ততক্ষণ জনমানুষের স্বার্থ কখনোই রক্ষা হবে না। রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেছেন, “তোমাদের প্রত্যেককে তার দায়িত্বের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হবে। শাসক তার শাসনকাজের ব্যাপারে, একজন পুরুষ তার পরিবারের ব্যাপারে, একজন দাস তার মালিকের ব্যাপারে” (সহীহ্ বুখারী)। তাই ইসলামী শাসনামলে খলিফারা ছিলেন জনমুখী। আল্লাহ্’র আধিপত্য ছাড়া আর কারো আধিপত্য শাসকরা বরদাশত করতেন না। রাষ্ট্রকে স্বনির্ভর করার জন্য শিল্পনীতি ও শিক্ষানীতি অনুসরণ করা হত। যার ফলে কলকারখানা ও দক্ষ লোকবল তৈরি হত। নানামুখী কাজে প্রচুর কর্মসংস্থান সৃষ্টি হত। যেমন ওমর (রাঃ) এর সময়ে ইরাক ও সিরিয়ার কৃষকদের পানি সেচের সুবিধা দেয়ার জন্য তিনি ইউফ্রেটিস নদীর পথ পরিবর্তন করান, এতে অর্থনীতিতে গতিসঞ্চার ও ইতিবাচক ফলাফল নিয়ে এসেছিল।
- জাবির জোহান