মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে না আসা পর্যন্ত নীতি সুদহার বাড়ানোর সিদ্ধান্ত

 

মূল্যস্ফীতি

খবরঃ

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র হুসনে আরা শিখা বলেন, “মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আমরা নীতি সুদ হার বাড়িয়েছি। জানুয়ারিতে মুদ্রাস্ফীতি কমে আসবে বলে আশা রাখছি। যদি মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে না আসে, ফের নীতি সুদ হার বাড়ানো হবে”। (https://www.youtube.com/watch?v=14vg4vxpYI8)

মন্তব্যঃ

বর্তমান পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো টাকা ছেপে এবং সুদ কমিয়ে-বাড়িয়ে মূলত পুরো অর্থনীতিই নিয়ন্ত্রণ করে। ব্যাংকে কোন সত্যিকারের সম্পদ উৎপাদন বা তৈরি না হলেও এর নিয়ন্ত্রণকারীরা বাজারে ইচ্ছামত টাকার প্রবাহ কমাতে বাড়াতে পারে। এই ব্যবস্থার জ্ঞানীরা সবাইকে বুঝায় যে এই Trickle Down পদ্ধতিতেই অর্থনীতির উন্নতি হয়। অথচ এটা দিবালোকের মত পরিষ্কার যে টাকা আসলে উপর থেকে নিচে ঝরে না। টাকা ছাপানো ও সুদের কারণে উপরে যখন বেশি টাকা জমা হয় তা একটি শক্তিশালী চুম্বকের মত কাজ করে যা নিচে অসংখ্য সাধারণ মানুষের কাছে থাকা লুজ কম পরিমাণ টাকা বা সম্পদগুলো উপরে টেনে নিয়ে যায়। 

সম্পদ উৎপাদন এবং সেবা বৃদ্ধির মাধ্যমে অর্থনীতির মূলচালিকা শক্তির কাজ করে কৃষক, শ্রমিক, ব্যবসায়ীসহ সেবাখাতের সাথে সম্পৃক্ত শ্রেণী। সুদের হার বৃদ্ধির ফলে সত্যিকার উৎপাদনের বা ব্যবসার খরচ বেড়ে যায়, ফলে এদের সক্ষমতা কমে যায় এবং জনগণ ব্যবসায়ে বিনিয়োগ করার চেয়ে উচ্চ সুদের আশায় আমানতে উজ্জীবিত হওয়ায় ব্যবসা-বাণিজ্যে স্থবিরতা আসে, কর্মসংস্থান কমে ও দারিদ্রতা বৃদ্ধি পায়। তাছাড়া, সুদ বৃদ্ধির এই প্রক্রিয়ায় জনগণের কাছে থেকে টাকা অর্থনীতির উপরের দিকে থাকা অধিক টাকাওয়ালা কতিপয় পুঁজিপতির হাতে পুঞ্জিভূত হয়। বলাবাহুল্য বর্তমান পুঁজিবাদী-গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় এই গোষ্ঠীটি আইন তৈরিকারী এবং আইনের প্রয়োগকারী সবাইকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। এই ক্ষমতাধররা সাময়িকভাবে উচ্চ সুদে টাকা ধার নিলেও তারা জানে এই টাকা ফেরত না দিলেও কোন সমস্যা নাই। এভাবে সম্পদের উপর সম্পদশালীদের অস্বাভাবিক নিয়ন্ত্রণের ফলে পর্যায়ক্রমিকভাবে স্বাভাবিক উৎপাদন প্রক্রিয়া ব্যহত হয়ে কিছুদিন পরপর অর্থনৈতিক মন্দা তৈরি হয়। সুদের হার বৃদ্ধি একেকটি অর্থনৈতিক মন্দাকে ত্বরান্বিত করে। একেকটি মন্দা মানে হলো অসংখ্য সাধারণ মানুষের নিঃস্ব হওয়া, সম্পদ খোয়ানো, আর কতিপয় ক্ষমতাবানদের আংগুল ফুলে কলা গাছ হওয়া। দেশের বাস্তবতায় এটা পরিষ্কার যে সাধারণ মানুষ এক ভয়ংকর অর্থনৈতিক সংকটে আছে অথচ ইউনুস সরকার ভয়ংকর পুঁজিবাদী নীতির বাস্তবায়ন আরও ত্বরান্বিত করছে। সুদভিত্তিক অর্থনীতি যে এমন নিষ্ঠুর ও যুলুমের চক্র তা দারিদ্রতাকে জাদুঘরে পাঠানোর ফাঁকা বুলি আওড়ানো পুঁজিবাদী শাসকগোষ্ঠী ভালোভাবেই জানে। তবুও তারা আগের গণবিরোধী সরকারগুলোর মতই এই যুলুমের চক্র চালু রাখছে। অনেক ক্ষেত্রে এটা আরও প্রতারণামূলকভাবে সুন্দর মোড়কে উপস্থাপন করছে। 

আল্লাহ্‌ সুবহানাহু তা‘আলা বলেন, “…যাতে ধন-সম্পদ তোমাদের মধ্যকার বিত্তশালীদের মাঝেই কেবল আবর্তিত না থাকে…” (সুরা হাশর ৭)। সুদ এবং কাগুজে মুদ্রা উভয়ে এই নির্দেশের বিপরীত। ইসলামী ব্যবস্থায় খলিফা এই উভয়কে বন্ধ করার পাশাপাশি কৃষকদের বিনামূল্যে বীজ, সার, সেচ ইত্যাদি সুবিধা দেয়ার মাধ্যমে উৎপাদন বাড়াবেন এবং সিন্ডিকেটসহ বাজারজাতকরণের সকল বাধা দূর করে সম্পদের সার্কুলেশন সহজ করবেন। ইসলামী ব্যবস্থায় সুদব্যবস্থা বিলুপ্ত এবং কারণ ছাড়া টাকা জমিয়ে রাখা নিষিদ্ধ হওয়ায়, জনগণ সম্পদ গচ্ছিত রাখার চেয়ে বিনিয়োগে উৎসাহী হবে, ফলে প্রচুর কর্মসংস্থান হবে। সর্বোপরী, আল্লাহ্‌’র নাযিলকৃত ব্যবস্থার বাস্তবায়নের মাধ্যমে নাগরিকরা যেমন আল্লাহ্‌’র সন্তুষ্টি লাভ করবে এবং পাশাপাশি একটি সুন্দর ও শক্তিশালী অর্থনীতি উপহার পাবে। “অতঃপর যখন সালাত সমাপ্ত হবে তখন তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ো, আর আল্লাহ্‌’র অনুগ্রহ হতে অনুসন্ধান করো এবং আল্লাহ্‌-কে বেশি বেশি স্মরণ করো যাতে তোমরা সফল হতে পারো” (সুরা জুমু‘আ: ১০)।

    -    মোহাম্মদ তালহা হোসেন

Post a Comment

Previous Post Next Post

Popular Items